হুমকির মুখে স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ সড়ক

ছৈয়দ আলম :
একদিকে বিশাল বঙ্গোপসাগর আর অপর পাশে গা ঘেঁষে পাহাড়। এটাই কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এখানে এসে কক্সবাজারের সৌন্দর্যকে নতুনভাবে উপভোগ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর এই সড়কটি নির্মাণ করেছে যা উপভোগ করছে হাজারো পর্যটক।

সৌন্দর্যময় ১২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বালুকাময় সমুদ্র সৈকত ঘেঁষে এই সড়কটি দেশের পর্যটনের অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।

কিন্তু সেই সড়কটি কিনা এখন যে স্বপ্ন নিয়ে করা সেই স্বপ্ন হুমকির মূখে পড়েছে। যার প্রধান বাধা এনজিওদের গাড়ি চলাচল।

একারনে বর্তমানে কলাতলি মোড় হয়ে মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংযোগ পর্যন্ত ভেঙ্গে একাকার হয়ে পড়েছে। আর মেরিন ড্রাইভের শুরু থেকে সোনারপাড়া সংযোগ সড়ক পর্যন্ত ফাটল ধরেছে। এভাবে যদি কয়েকমাস অনবরত যান চলাচল করে তাহলে একদম চলাচল অনুপযোগি হয়ে পড়বে।

অপরদিকে রোহিঙ্গাদের চাপে নষ্ট হতে বসেছে কক্সবাজারের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলোর সৌন্দর্যও। ইতোমধ্যে সমুদ্র সৈকতের পাশ দিয়ে যাওয়া মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে ঝুপড়ি ঘর তুলেছে অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিবার।

সংশ্লিষ্টরা বলছে, এদের সরিয়ে নিতে না পারলে হুমকির মুখে পড়তে পারে এখানকার পর্যটন শিল্প।
সমুদ্রের পাড় ঘেষে দেশের অন্যতম পর্যটন আকর্ষন মেরিন ড্রাইভ সড়ক।

এই সড়কের একপাশে সাগরের পাশাপাশি অন্যপাশে আছে সবুজ পাহাড়ের সারি। ইতোমধ্যে এটি হয়ে উঠেছে ভ্রমন পিপাসুদের অন্যতম গন্তব্য।
কিন্তু মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকে বসতি গড়েছে এই সড়কেও।

শামলাপুর থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার জুড়ে সড়কের দুইপাশে অবস্থান নিয়েছে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা পরিবার। ফলে সুন্দর সড়কটি ভরে উঠছে নানা রকম আবর্জনায়। আর তাদের অব্যাহত শুটকির গন্ধে পরিবেশ নষ্টের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

পর্যটকদের জন্য আর্কষনীয় এই সড়কে রোহিঙ্গাদের অবস্থানকে আশংকাজনকই বলছে কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

আর বর্তমানে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত দেখতে কক্সবাজার আসে দেশি-বিদেশি পর্যটক। সেই পর্যটক সোজা কলাতলি হয়ে চলমান সাবরাং এক্সক্লোসিভ ট্যুরিষ্ট জোনে চলে যাচ্ছে আগত পর্যটকরা। যা যেতে সময় লাগে মাত্র ১ ঘন্টা।

কক্সবাজার পিপলস ফোরামের মূখপাত্র সাংবাদিক এইচএম নজরুল ইসলাম জানান-যে স্বপ্ন নিয়ে স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ সড়ক করা হয়েছিল সেই স্বপ্ন ভেস্তে যাবার পথে। বর্তমানে যেভাবে এনজিও’র গাড়ি চলাচল করছে তা আর ৬ মাস চলাচল করলে এই সড়কটি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে যাবে। তাই এনজিওদের গাড়ি চলাচল করার জন্য বিকল্প সড়ক নির্মাণের জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।

শ্রমিকনেতা ও কক্সবাজার সম্পদ রক্ষা বিশ্লেষক নাজিম উদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন-মেরিন ড্রাইভ সড়ক বিশে^র একটি পর্যটন শিল্পে অবদান রাখার মত সড়ক। বর্তমানে এই স্বপ্নের সড়কে দেশি-বিদেশী পর্যটকও আসছে। কিন্তু সেই সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত শত শত রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা এনজিও’র গাড়ি চলাচল করছে তা অত্যান্ত দুংখজনক। যার কারনে সড়কের ভাঙন দীর্ষ হচ্ছে।

তিনি এই সড়ক দিয়ে এনজিও’র গাড়ি চলাচলে নিষেধাঙা দেয়ার আহবান জানান। তিনি লিংকরোড-টেকনাফ ও কলাতলি-মেরিন ড্রাইভ সড়ক বাদ দিয়ে বিকল্প সড়ক নির্মাণ ও চলাচলের পরামর্শ দেন।

এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে-স্বাভাবিকের চেয়ে সাগরের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বঙ্গোপসাগরের বিশাল বিশাল ঢেউ প্রতিনিয়ত আঘাত হানছে মেরিন ড্রাইভের উপর। সাগরের উচ্চতা ক্রমশ বাড়ছে। অব্যাহত ভাঙনে তলিয়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের পাশ ঘেঁষে তৈরি মেরিন ড্রাইভ সড়ক পূর্ণিমার জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসে বিলীনের পথে মেরিন ড্রাইভ।

বিশেষ করে, কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত সড়কের পাঁচ কিলোমিটার এলাকা পড়েছে চরম ঝুঁকির মুখে। যেকোনো মুহুর্তে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

বিশেষ করে সড়কের কক্সবাজার অংশের কলাতলী, দরিয়ানগর, বড়ছড়া, হিমছড়ি, তিন ডেইঙ্গা, ওয়াঝরনা, বাট্টু মিয়ার খামার পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

তবে এখনো সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এ সড়ক রক্ষার্থে। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থায় ভাঙন প্রতিরোধ করা না হলে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সড়ক অচিরেই বিলীন হয়ে যাবে বলে বিজ্ঞ মহলের অভিমত।

কলাতলির রিক্সা চালক হাসান জানান, আগে কলাতলি মোড় হয়ে দরিয়ানগর ও হিমছড়ি যেতে পারতাম কিন্তু এখন যেতে পারছিনা। সড়কে ভাঙন আর খন্দ মানুষের প্রানতো দুরের কথা রিক্সার যন্ত্রাংশ পর্যন্ত ভেঙে যাচ্ছে। তিনি দ্রুত সড়ক সংস্কারের দাবি জানান।

সচেতনমহল জানিয়েছেন-কক্সবাজার-টেকনাফ ৮০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ সড়ক পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকতের পাশ দিয়ে নয়নাভিরাম এই সড়ক দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। কক্সবাজার পর্যটন শিল্প বাংলাদেশের এক অমিত সম্ভাবনাময় খাত।

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস ঐতিহ্যমন্ডিত বিভিন্ন স্থাপনা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। কিন্তু পর্যটন শিল্পের বিকাশ ততোটা হয়নি যতোটা হওয়া উচিত ছিল। এ জন্য এক্ষেত্রে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। সে সুযোগ কাজে লাগাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

সেই পরিকল্পিত আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে মেরিন ড্রাইভ সড়ক ও পর্যটন শিল্পকে বাস্তবে রূপ দিতে পারলে বাংলাদেশ হবে সিঙ্গাপুর ও মালেশিয়ার মত উন্নত দেশ।